শ্বশুরকে জামাতার ঝাড়ু পেটা, নিন্দার ঝড়
- আপডেট সময় : ০৫:৫১:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ মে ২০২৪ ৩৪ বার পড়া হয়েছে
শ্বশুরকে জামাতার ঝাড়ু পেটা, নিন্দার ঝড়
লক্ষ্মীপুর:
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে শ্বশুর আনল হককে (৫২) ঝাড়ু দিয়ে পিটিয়েছে মেয়ে জামাতা মহিন ও তার ভাই নাছির। এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে ক্ষোভ এবং নিন্দার ঝড় বইছে।
এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় এলাকাবাসী মহিন ও নাছিরের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলার চারমার্টিন ইউনিয়নের উত্তর মার্টিন গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, শ্বশুরের উপর হামলার ঘটনায় শ্বশুর আনল হক বাদি হয়ে কমলনগর থানায় মামলা করেন। মামলায় তার মেয়ে জেসমিন আক্তারের জামাতা মহিন (৩২), জেসমিনের ভাসুর নাছির উদ্দিন (৩৪), মো. মনির (৩৮) ও মো. খোকন, আত্মীয় সবুজ (২৮) ও মো. কালুকে (২৬) আসামী করা হয়। বিবাদিরা গত ১৯ মে আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত আসামি নাছির ও কালুর জামিন দিয়ে বাকিদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৮ মে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মহিন ও তার ভাইয়েরা পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী (আনারস) আহছান উল্ল্যা হিরনের পক্ষে ভোট করে। অন্যদিকে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন খালেদ সাইফুল্লাহর (মোটরসাইকেল) পক্ষে সমর্থন দেন। প্রার্থীদের সমর্থন করা নিয়ে শ্বশুরের উপর ক্ষিপ্ত হয় জামাতা মহিন।
ভোট গ্রহণের দিন আনল হক ও তার ভাই নাজল হক বাড়ির পাশের দোকানে বসে চা পান করেছিলেন। তখন জামাতা মহিন একটি ঝাড়ু হাতে এসে শ্বশুর আনল হককে এলোপাতাড়ি ঝাড়ুপেটা করতে থাকেন৷ এতে উপস্থিত লোকজন হতবাক হয়ে পড়েন। এ সময় মহিনের ভাই নাছিরও লাঠি দিয়ে আনল হক ও তার ভাই নাজল হককে পেটান।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নুর মোহাম্মদ ভান্ডারী বলেন, আমি দোকানের সামনে বসে ছিলাম। হঠাৎ দেখি মহিন ঝাড়ু দিয়ে তার শ্বশুর আনল হককে পেটাতে শুরু করে। পরে উপস্থিত লোকজন তাকে শান্ত করার চেষ্টা করে। তার আগেই আনল হককে পিটিয়ে জখম করা হয়। তার সাথে নাছিরও ছিল।
ভুক্তভোগী শ্বশুর আনল হক বলেন, কি এমন অন্যায় করেছি, যে মেয়ে জামাই আমাকে ঝাড়ু দিয়ে পেটাতে হবে? সমাজের লোকজনের সামনে ঝাড়ুপেটা করে আমার মানসম্মান শেষ করে দিয়েছে। আমাকে রক্তাক্ত করেছে, তাতে দুঃখ নেই। কিন্তু ঝাড়ু দিয়ে পিটিয়ে আমাকে সমাজের কাছে চরম অসম্মান করেছে। আমি এর বিচার চাই।
তিনি বলেন, ঘটনার সময় জামাতা মহিনের অন্য ভাই এবং আত্মীয়রা আমার ভাইদেরও মেরেছে। আমার মেয়েকে তাদের পক্ষে নিয়ে এখন আমাদের বিরুদ্ধে উল্টো অভিযোগ তুলেছে। আমাকে বিবাদী করে মামলা করেছে।
আনল হকের মেয়ে ফেরদৌসী বেগম বলেন, আমার বাবাকে রক্তাক্ত করা হয়েছে। আমার বোনও তাদের পক্ষ নিয়ে কথা বলছে। আমার বোন সহজসরল। তাকে যেভাবে বুঝিয়ছে, সে ওইভাবে তাদের মতো করে কথা বলছে। আমাদের সাথে কথা বলতে দিচ্ছে না।
আনলের ভাই নুরুল হক বলেন, আমাদের উপর আক্রমণের পর মানসম্মানের কথা চিন্তা করে আমরা চুপ করে ছিলাম। কিন্তু ঘটনার পরদিন আমার ভাতিজিকে বাদি করে আমাদের বিরুদ্ধে আদালতে একটা অভিযোগ আনা হয়েছে। যা ‘ভিত্তিহীন’ ছিল। পরে আমরাও থানায় মামলা করি৷ এরপর ১৯ মে আমাদের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ আনা হয়।
তিনি বলেন, ঘটনার মূলহোতা মহিনের ভাই নাছির। তার স্ত্রী নারী ইউপি সদস্য। সে ওই প্রভাব বিস্তার করে। সে জামিনে এসে এখন আমাদের হুমকি দেয়। যেভাবে হোক, সে নাকি আমাদের বড় ধরনের ক্ষতি করে ফেলবে। আমরা এখন তার আতঙ্কে আছি।
আনলের প্রতিবেশি আলী হোসেন ও আবুল বাশার বলেন, শ্বশুরকে মেয়ের জামাতা ঝাড়ু দিয়ে পিটিয়েছে, এটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এমন ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার হওয়া উচিত। তা না হলে সমাজে এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটবে।